নিজস্ব প্রতিবেদক
একটি নিঃশব্দ ক্যানভাস—যেখানে রঙ ও রেখা শুধু দৃশ্য নয়, রূপ পায় আত্মার প্রকাশে। সেখানেই উদ্ভাসিত হন রকিব মুক্তাদির—এক নিরলস শিল্পযাত্রী, যার তুলি বাংলার প্রণত সৌন্দর্যকে ধারণ করে নিঃশব্দ কাব্যে।
শিল্পীর চোখে দৃশ্যমান জগৎ শুধুই বাহ্যিক নয়, বরং অনুভব, কল্পনা আর চিন্তার এক সংগীতময় মেলবন্ধন। রকিব মুক্তাদির সেই চোখ নিয়ে আঁকেন জলরঙে—যেখানে একটি কুয়াশামগ্ন সকাল, কিংবা প্রান্তরের শূন্যতা হয়ে ওঠে নিঃশব্দ গল্প। তার তুলির টানে গ্রামীণ বাংলার মেঠোপথ, জলপাই ছায়া, কিংবা আকাশভরা মেঘ এসে দাঁড়ায় হৃদয়ের পাশে।
ছবির পেছনে লুকিয়ে থাকে এক নিগূঢ় মেধার চর্চা—যা শুধু আঙুলের দক্ষতা নয়, বরং গভীর পর্যবেক্ষণ, অনুরাগ ও অনুভবের সযত্ন নির্মাণ। রকিব জানেন—একটি ছবি আঁকতে হলে শুধু দৃশ্য নয়, দরকার অন্তর্দৃষ্টি। দৃশ্যকে চিত্রে রূপান্তর করতে হলে মস্তিষ্কে আগে তৈরি করতে হয় এক ‘চিত্রমনের’ অবয়ব, যেখানে আলো-আঁধারির সংলাপ, রঙের ভারসাম্য এবং রচনার ছন্দ ধরা পড়ে স্পষ্টতর ব্যঞ্জনায়।
তিনি বলেন, “চিত্রশিল্প মূলত এক ধ্যান। যেখানে রঙের ভেতর ডুবে যেতে হয়, দেখতে হয় যা চোখে দেখা যায় না, কিন্তু অনুভবে ধরা পড়ে।” এ অনুভব থেকেই তাঁর শিল্পজগৎ; যার প্রতিটি রেখা, প্রতিটি রঙের স্তর যেন এক নিরব কবিতা।
শিল্পী রকিব মুক্তাদিরের চিত্রকর্ম দেশের গন্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও প্রশংসিত হয়েছে। তিনি ২০২৩ সালে ময়মনসিংহ বিভাগীয় চারু শিল্পী পর্ষদ আয়োজিত আটটি দেশের শিল্পীদের নিয়ে অনুষ্ঠিত “LET’S MET THE MAGIC OF ART” চিত্র প্রদর্শনীতে জলরং বিভাগে প্রথম স্থান অর্জন করেন। ২০২৪ সালের জুলাইয়ে ঢাকা ইউনিভার্সিটি এর চারুকলায় অনুষ্ঠিত তার একক জল রং চিত্র প্রদর্শনী “কবিতার রং” তাকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। তার আঁকা জল রঙের আকাশ দেখে দর্শনার্থীদের উচ্ছ্বসিত মুগ্ধতা প্রকাশ পেয়েছে। তিনি প্রতিদিন জলরং এর সাধনায় নিজেকে ডুবিয়ে রাখেন। তিনি তার কর্ম চিত্র সাধনা দ্বারা আন্তর্জাতিক শিল্পাঙ্গনে একটি স্থায়ী ছাপ রেখে যেতে চান।
এই শিল্পী শুধু ছবি আঁকেন না, তিনি সময়ের নিরব কথক। তার তুলিতে উঠে আসে বাংলার নিসর্গ, মানুষের মুখচ্ছবি, কিংবা একটি সোনালি বিকেলের নিঃসঙ্গতা। তিনি আমাদের শেখান—শিল্প মানে কেবল শৈল্পিকতা নয়, এক আত্মার আলোড়ন।
রকিব মুক্তাদির আজ আমাদের কাছে এক শৈল্পিক প্রতিচ্ছবি—যিনি ক্যানভাসে রাখেন মাটির গন্ধ, আকাশের নীল, আর মানুষের সজীব অস্তিত্ব। তিনি সেই শিল্পী, যার তুলির টানে বাংলা ফিরে পায় নিজস্ব চিরন্তন ভাষা।