সরকারি চাকরিতে কোটা নামক ধূম্রজাল বেঁধে রেখেছে মেধাবীদের। অন্যদিকে আবার চাকরির প্রশ্নপত্র ফাঁস। এ দুই বিষয় নিয়ে অনিশ্চিত মেধাবীদের ক্যারিয়ার–ভাবনা। উচ্চবিত্ত পরিবারের মেধাবীদের বিদেশে পাড়ি জমানোর সুযোগে পাচার হচ্ছে মেধা এবং দেশে অবস্থানরত নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের মেধাবীরা হারাচ্ছেন পড়াশোনার আগ্রহ।

চলমান কোটাব্যবস্থা অনুযায়ী, বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে মোট ২৫৮ ধরনের কোটা রয়েছে । কোনো পরীক্ষার মাধ্যমে সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি) যদি ১০০ জন লোক নিয়োগ করে, তাহলে মাত্র ৪৪ জন নিয়োগ পাবেন মেধার ভিত্তিতে। বাকি ৫৫ জনের মধ্যে ৩০ জন নিয়োগ পাবেন মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের মধ্য থেকে, ১০ জন নারী কোটায়, ১০ জন অনগ্রসর জেলার বাসিন্দা কোটায়, ৫ জন নিয়োগ পাবেন উপজাতি কোটায় এবং ১ জন প্রতিবন্ধী কোটায়।

দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ের মেধা মূল্যায়ন প্রতি বিসিএসে সাধারণ ক্যাডারে গড়ে ৫০০ জন কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু অংশ নেন দেড় থেকে দুই লাখ পরীক্ষার্থী। কোটাপদ্ধতির কারণে কেউ যদি দুই লাখ পরীক্ষার্থীর মধ্যে ২২৬তম হন, তাহলে তিনি চাকরি না-ও পেতে পারেন। কারণ, ৫০০ পদের মধ্যে মেধা কোটায় ২২৫ জনকে দেওয়া যাবে। কাজেই ২২৬তম হয়ে তিনি চাকরি পাবেন না। আবার কোটা থাকলে কেউ সাত হাজারতম হয়েও চাকরি পেতে পারেন। তবু বিসিএস পরীক্ষার প্রতি জনগণের সর্বোচ্চ আস্থা ছিল। কিন্তু ৩৩ থেকে ৪৬তম বিসিএসের প্রশ্নপত্র ফাঁসের কথা শুনে দেশের মানুষ যেন আকাশ থেকে পড়ল।

২০১৮ সালে কোটাবিরোধী আন্দোলনের ফলে সরকার কোটা সংস্কার করে। কিন্তু গত ৫ জুনের আদালতের রায়ের পরে সরকারি চাকরিতে এ পদ্ধতি পুনর্বহাল করা হলে কোটা সংস্কারে আবারও চার দফা দাবি নিয়ে আন্দোলনে উত্তাল হয়ে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি প্রাঙ্গণ। দাবিগুলো হলো, ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহাল, পরিপত্র পুনর্বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে সকল সরকারি চাকরিতে কোটাকে ন্যূনতম পর্যায়ে নিয়ে আসা, সর্বোচ্চ একবার কোটা ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া আর কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়া এবং দুর্নীতিমুক্ত-মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করা। শিক্ষার্থীদের দাবি সব গ্রেড (১ম-২০তম) এবং শ্রেণির (১ম-৪র্থ) সরকারি চাকরিতে মোট ৫ শতাংশ রাখা হোক।

কোটাব্যবস্থা ও প্রশ্নপত্র ফাঁসের ফলে যোগ্যরা হারাচ্ছেন তাঁদের কর্মসংস্থান এবং তৈরি হচ্ছে অযোগ্যদের এক বিশাল বলয়। এই দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান কোটাব্যবস্থা এবং প্রশ্নপত্র ফাঁসের রোষানলে পড়ে প্রতিবছর কাঙ্ক্ষিত শিক্ষা এবং চাকরি থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে লক্ষাধিক মেধাবী শিক্ষার্থীকে। যে রাষ্ট্র স্বাধীন হয়েছে গরিব মেহনতি মানুষের অধিকার প্রদানের জন্য, তা আজ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। গরিব ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানদের অনেক স্বপ্ন থাকে, তাঁরা ভালো একটা চাকরি পেয়ে মা-বাবার মুখে হাসি ফোটাবেন। কিন্তু তাঁদের এ স্বপ্ন অধরাই থেকে যায় কোটা নামক বৈষম্যের কাছে।

লেখক: শিক্ষার্থী, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর

By Bikram Das

"A bold voice in publishing—we tell stories that move, provoke, and last. Rooted in truth and creativity, we give words their power."

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সম্পাদকঃ প্রভাষক মোঃ আনোয়ার হোসেন ।। সহ-সম্পাদকঃ তারিফুল ইসলাম মুন